ডিসেন্ট ওয়ার্ক (Decent Work) কি?
- mmkhokan
- Jan 23
- 6 min read

ডিসেন্ট ওয়ার্ক বা শোভন কাজ এক ধরনের কর্মসংস্থান যা মানুষের কর্মক্ষেত্রে মৌলিক অধিকারের পাশাপাশি শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক অধিকার সংরক্ষণ করে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (International Labour Organization) সংজ্ঞানুযায়ী,
” মানুষের কর্মক্ষেত্রে তাদের প্রত্যাশাগুলো পূরণ করাকে ডিসেন্ট ওয়ার্ক (Decent work) বলে।
এ বিষয়গুলো উৎপাদনশীলতা, ন্যায্য মজুরী, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, সবার জন্য সামাজিক সুরক্ষা, ব্যক্তিগত উন্নয়ন, সামাজিক বন্ধন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সংগঠিত হবার অধিকার এবং সবার জন্য সমান সুবিধা এবং আচরণ নিশ্চিত করে।
১। ন্যায্য মজুরী।
২। কর্মসংস্থান এর নিয়মতান্ত্রিক কাঠামো
৩। কাজের নিরাপদ পরিবেশ।
৪। সবার জন্য সমান সুবিধা এবং আচরণ।
৫। কর্মীদের এবং তাদের পরিবারসমূহের সামাজিক নিরাপত্তা।
৬। ব্যক্তিগত উন্নয়নের সুযোগ এবং সামাজিক অংশগ্রহণ ।
৭। কর্মীদের ব্যক্তি সচেতনতা এবং অভিব্যক্তি প্রকাশের স্বাধীনতা।
ডিসেন্ট ওয়ার্ক ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলগুলোর মধ্যে অষ্টম।

এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা
‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি)’ বা দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন বলতে ঐ ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডকে বোঝায় যার মাধ্যমে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাও নিশ্চিত হয় আবার প্রকৃতি এবং ইকোসিস্টেমেও কোনো খারাপ প্রভাব পড়ে না। অর্থাৎ, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা হলো, ভবিষ্যত আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংক্রান্ত একগুচ্ছ লক্ষ্যমাত্রা।
১৯৮৭ সালে প্রথমবারের মত স্থিতিশীল উন্নয়নের প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয় ব্রুন্টল্যান্ড কমিশনের রিপোর্টে। এরপর জাতিসংঘ সকলের জন্য টেকসই সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত ১৫ বছর মেয়াদি ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল’ বা এসডিজি নামক ১৭টি লক্ষ্য ও ১৬৯ টি সহায়ক লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করে।
এ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার বাকি ১৬ টি লক্ষ্যের অনেক গুলো লক্ষ্যের সাথেই শোভন কাজ এর মূল উপাদানগুলো ব্যাপকভাবে সংশ্লিষ্ট।
জাতিসংঘের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের ১৭ টি প্রধান লক্ষ্য
দারিদ্র বিমোচন : সর্বস্তরের সব ধরনের দরিদ্রতা দূর করা।
ক্ষুধামুক্তি ও খাদ্য নিরাপত্তা : অভুক্ততা দূরীকরণ, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন এবং দীর্ঘমেয়াদী কৃষি উন্নয়ন।
সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণ : সব বয়সী মানুষের জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনমান নিশ্চিতকরণ এবং উন্নীতকরণ।
শিক্ষা : শিক্ষার ক্ষেত্রে সকলকে সমানাধিকরণ ও সমানভাবে মূল্যায়ন করা নিশ্চিতকরণ এবং কর্মমুখী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া।
লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ : লিঙ্গসমতা অর্জন করে সকল নারী এবং মেয়েকে ক্ষমতায়ন করা।
সুপেয় পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন : সকলের জন্য পানি এবং পয়ঃনিষ্কাশনের সহজলভ্যতা এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।
সাশ্রয়ী জ্বালানী : সবার জন্য সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য, স্থিতিশীল, এবং অত্যাধুনিক জ্বলানী নাম নিশ্চিত করা।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও ডিসেন্ট ওয়ার্ক : সবার জন্য টেকসই, সমান মূল্যায়ন ও স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, পূর্ণকালীন ও সৃজনশীল কর্মসংস্থান, এবং কাজের পরিবেশের (Decent work) ব্যবস্থা করা।
অবকাঠামো ও শিল্পায়ন : অবকাঠামো নির্মান, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থিতিশীল শিল্পায়ন এবং নব উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা।
দেশীয় বৈষম্য হ্রাস : দেশের অভ্যন্তরে ও আন্তঃরাষ্ট্রীয়বৈষম্য হ্রাস
নিরাপদ শহর : মানব বসতি ও শহরগুলোকে নিরাপদ, অন্তর্ভুক্তিমূলক, অবকাঠামোমূলক এবং স্থিতিশীল রাখা।
সম্পদের সুষ্ঠ ব্যবহার : দীর্ঘমেয়াদী ভোগ এবং উৎপাদনের ধরন নিশ্চিত করা।
জলবায়ু বিষয়ে পদক্ষেপ : জলবায়ুর পরিবর্তন এবং এর প্রভাব মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ।
সামুদ্রিক সম্পদের সুষ্ঠ ব্যবহার : স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য সাগর,মহাসাগর এবং জলজ সম্পদ সংরক্ষণ করা এবং পরিমিত ব্যবহার করা।
ভূমির সুষ্ঠ ব্যবহার : ভূপৃষ্ঠীয় বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করা, পুনর্বহাল করা এবং পরিমিত ব্যবহারে উৎসাহিত করা, স্থায়ী বন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, মরুকরণ রোধ করা, ভূমিক্ষয় রোধ করা এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিসাধন রোধ করা।
সামাজিক শান্তি ও ন্যায়বিচার : শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক সমাজ, সকলের জন্য ন্যায়বিচার, সকল স্তরে কার্যকর, জবাবদিহিতামূলক ও অংশগ্রহণমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা।
বৈশ্বিক অংশগ্রহন : টেকসই উন্নয়নের জন্য এ সব বাস্তবায়নের উপায় নির্ধারণ ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের স্থিতিশীলতা আনা।
জাতিসংঘের ২০৩০ সালের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার ১৭ টি লক্ষ্যমাত্রার আলোকে এবং ড্যাশবোর্ডস রিপোর্ট ২০১৮ অনুযায়ী, ১৫৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১১তম। বাংলাদেশের স্কোর ৫৯.৩। ২০১৭ সালে এর অবস্থান ও স্কোর ছিলো যথাক্রমে ১২০ ও ৫৬.২। শুধু ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান বাদে দক্ষিণ এশিয়ার নেপাল, ভুটান অবস্থানের দিক দিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। ৫৯.১ স্কোর নিয়ে ভারত আছে ১১২ নম্বরে, ৫৪.৯ স্কোর নিয়ে পাকিস্তান আছে ১২৬ নম্বরে এবং ৪৬.২ স্কোর নিয়ে আফগানিস্তানের অবস্থান ১৫১।
জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়নের ৮টি লক্ষ্য সফলভাবে পূরণ করলেও প্রকাশিত এই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে এসডিজির ১৭ টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ৮ টি তেই ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ, ২০১৭ তে যার সংখ্যা ছিলো ১০টি।
বর্তমানে বাংলাদেশ যে ৮টি স্থিতিশীল লক্ষ্যমাত্রায় প্রত্যাশার তুলনায় পিছিয়ে আছে, সেগুলো হলো – ২, ৩, ৭, ৯, ১১, ১৪, ১৬, ও ১৭ তম এসডিজি। অর্থাৎ, ক্ষুধামুক্তি ও খাদ্য নিরাপত্তা, সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণ, সাশ্রয়ী জ্বালানী, অবকাঠামো ও শিল্পোন্নয়ন, নিরাপদ শহরায়ন, সামুদ্রিক সম্পদের সুষ্ঠ ব্যবহার, সামাজিক শান্তি ও ন্যায় বিচার এবং বৈশ্বিক অংশগ্রহণ এই লক্ষ্যসমূহ অর্জনে পিছিয়ে আছে।
এগুলোর মধ্যে ক্ষুধা, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, অনুন্নত শিল্পায়ন অনেকভাবেই বেকারত্বের সাথে জড়িত যা ডিসেন্ট ওয়ার্ক এর অকার্যকর ভূমিকা নির্দেশ করে। অনিরাপদ শহর, সামাজিক অশান্তি এবং ন্যায় বিচারের অভাব পরোক্ষভাবে ডিসেন্ট ওয়ার্ক এর সাথে সাংঘর্ষিক।
দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের জন্য ২০১৫ সালের জাতিসংঘ কর্তৃক আয়োজিত সাধারন সভায় মোট ১৭ টি লক্ষ্যের মধ্যে ৮ নাম্বার লক্ষ্য তৈরি হয় দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, পূর্ণকালীন এবং উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান ও ডিসেন্ট ওয়ার্ক এর অগ্রগতির জন্য।
এই সাধারণ সভায় ডিসেন্ট ওয়ার্ক কর্মসূচির চারটি স্তম্ভকে ২০৩০ সালের নতুন কর্মসূচির অপরিহার্য উপাদান করা হয়েছে। ডিসেন্ট ওয়ার্ক এর পিলার বা উপাদান হল চারটি – কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা, কর্মক্ষেত্রের অধিকারসমূহ এবং সামাজিক বাক-স্বাধীনতা।
কর্মসংস্থান বৃদ্ধি
সাধারণত কর্মসংস্থান বলতে সরকারি, বেসরকারি, স্থায়ী, অস্থায়ী, লিখিত চুক্তি বা অলিখিত চুক্তি আওয়াতাধীন সবধরনের কাজই কর্মসংস্থান এর অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু ডিসেন্ট ওয়ার্ক এর প্রধান লক্ষ্য উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।
ডিসেন্ট ওয়ার্ক কান্ট্রি প্রোফাইল বাংলাদেশ ২০১৩ এর তথ্য অনুযায়ী ২০১০ সালে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৭% কোনো না কোনো কাজের সাথে সম্পৃক্ত। সম্পূর্ণ বেকারদের সংখ্যা প্রায় ৮%।
কর্মীদের মধ্যে লিখিত চুক্তিহীনভাবে কাজ করছে প্রায় ৮৮%। কাজ করতে বাধ্য করা হয় এমন সংখ্যা হবে প্রায় ৬০%। অর্থাৎ মোট কর্মসংস্থান এর প্রায় বিশাল একটা অংশ (৮৮%) অনানুষ্ঠানিক কাজ করছে যা জাতীয় অর্থায়নে ভূমিকা রাখলেও তদারকির বাইরে। তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা ন্যায্য মজুরী পায় না, নিজেদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে পারে না, কর্মস্থলের উপযুক্ত পরিবেশ পায় না, সামাজিক নিরাপত্তামূলক সুবিধাসমূহ থেকে বঞ্চিত হয়, ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে বাধ্য হয়, যেকোনো সময় চাকরিচ্যুত হওয়ার ভয় থাকে।
সামাজিক নিরাপত্তা

সামাজিক নিরাপত্তা বলতে বোঝায় সমাজে কোন মানুষের বেঁচে থাকার জন্য আর্থিক এবং শারীরিক সুস্থতার নিরাপত্তা।
বেকার / বয়ষ্ক ভাতা
যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কোন মানুষের কর্মসংস্থান এর সুযোগ না হলে তাকে যথোপযুক্ত কাজ দেয়া বা বেকারকালীন ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা করা যা বিশ্বের প্রায় সব উন্নত দেশে সফলভাবে প্রতিষ্ঠিত। এছাড়াও কোন দেশের নাগরিক উপার্জন করার মত স্বাবলম্বী না হওয়া পর্যন্ত তার খরচ বহন করার অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশগুলোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই সামাজিক সুবিধাগুলো এখনো সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে উঠেনি।
কোন দেশের নাগরিক বয়সের বার্ধক্যজনিত কারনে জাতীয় অর্থায়নে অর্থাৎ উপার্জনে অক্ষম হলে মানুষ গুলোর আর্থিক নিরাপত্তামূলক বয়স্ক ভাতা বা পেনশন হতে পারে উত্তম সমাধান।
অসুস্থতা
বাংলাদেশ শ্রমিক আইন ২০০৬ এর ১৫১ নং ধারা অনুযায়ী কোন শ্রমিক অসুস্থ থাকলে তাকে মেডিকেল সার্টিফিকেট সাপেক্ষে ছুটি দেয়া বাধ্যতামূলক যদি তা তিনদিনের বেশি হয় এবং সেক্ষেত্রে বেতন কেটে রাখা যাবে না। প্রথম দুই মাস সম্পূর্ণ বেতন পাবে, পরের দুই মাস বেতনের তিনভাগের দুইভাগ পাবে এবং পরবর্তী ১২ মাস পর্যন্ত বেতনের অর্ধেক পাবে।
অসুস্থতা যদি প্রশাসনিক রোগের প্রাদুর্ভাব বা টেকনিক্যাল জখমের কারনে হয় তাহলে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত সেই শ্রমিক কাজ না করেও বেতন পেতে পারে।
কিন্তু পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী মানুষটি কোনো মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হলে অনেক পরিবারের উপার্জন বন্ধ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে চিকিৎসা করাতে গিয়ে পরিবারটি নিঃস্ব হলেও তাদের চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান অনেক সময় উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয় না। উপযুক্ত চিকিৎসা সুবিধার অভাবে অনেক উপার্জনক্ষম স্বচ্ছল পরিবারও হতদরিদ্র হয়ে যায়।
কর্মস্থলে উৎপাদনশীল হওয়ার জন্য কর্মীর স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়া জরুরি। সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে তাকে চিকিৎসা সুবিধা দেয়া প্রশাসনের দায়িত্ব। পাবলিক হেলথ ইন্স্যুরেন্স সুবিধার মাধ্যমে নাগরিকদের স্বাভাবিক চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব। ডিসেন্ট ওয়ার্ক প্রতিষ্ঠিত প্রায় এমন সব দেশেই পাবলিক মেডিকেল ইন্স্যুরেন্স বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
কোভিড-১৯ মহামারী প্রাদুর্ভাবের সময় অনেক কর্মস্থলের মানুষ ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে ছিল। চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়েও অনেক ডাক্তার প্রাণ হারিয়েছে। জনসচেতনতার অভাবে বা জীবনের তাগিদে বাধ্য হয়ে কাজে নেমেছে মানুষ। যেকোনো মহামারীর প্রাদুর্ভাব বা সংক্রমণ এড়াতে চাই কর্মস্থলে কঠোর নিরাপত্তামূলক বিধিবিধান প্রয়োগ।
মা যখন কর্মী
জীবনের তাগিদে অনেক মা কর্মস্থলে গেলেও রয়ে যায় দুধের শিশুর জন্য পিছুটান। বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর চতুর্থ অধ্যায়ের ৪৩ নং ধারা অনুযায়ী মাতৃকালীন ছুটি সর্বোচ্চ ৮ সপ্তাহ, অর্থাৎ মাত্র ২ মাস।
বাংলাদেশে অধিকাংশ কর্মস্থলে কোনো চাইল্ড কেয়ার থাকে না যেখানে দুধের শিশুকে রেখে মা নিশ্চিন্ত কাজ করতে পারবেন। অনেকেই গৃহকর্মীর উপর শিশুর দায়িত্ব দিয়ে কর্মস্থলে যান। যারা অধিকাংশ সময় অশিক্ষিত এবং আস্থাহীন হয়ে থাকে।
এভাবে একদিকে একটি দুধের শিশু তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, ঝুঁকির মধ্যে বড় হয়, সঠিক যত্ন ও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। গৃহকর্মী দ্বারা শিশু নির্যাতনের ঘটনাও অসংখ্য। এভাবে মায়ের থেকে দূরত্ব শিশুর মানসিক এবং শারীরিক বিকাশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অপরদিকে সন্তানের পিছুটানের কারনে সেই মহিলা কর্মী কর্মস্থলে উৎপাদনশীল হতে বাধাগ্রস্ত হয়। নারী কর্মীদের মাতৃত্বকালীন পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না দেওয়াও একধরনের লিঙ্গবৈষম্য। ডিসেন্ট ওয়ার্ক এর অন্যতম লক্ষ্য হল উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান এর সুযোগ করা এবং কর্মস্থল বৈষম্যহীন হওয়া। একজন নারীকর্মীর সন্তান পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে নিরাপত্তা পাওয়া তার নাগরিক অধিকার।
কর্মক্ষেত্রের অধিকারসমূহ
কর্মক্ষেত্রের অধিকারসমূহ বলতে বোঝায় কাজের সময়সীমার নিয়ম মেনে কাজ করার অধিকার, অতিরিক্ত কাজের সুযোগ থাকা, ন্যায্য পারিশ্রমিক, যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করার অধিকার, কাজ ছেড়ে দেয়ার অধিকার, জোরপূর্বক কাজ নয়, শিশুশ্রম নয়, ক্ষতিপূরণ, কর্মস্থলের পরিবেশের নিরাপত্তা প্রদান , নারীকর্মীর সার্বিক নিরাপত্তা , বৈষম্যহীন পরিবেশ (লিঙ্গ, ধর্ম, বর্ণ, রাজনৈতিক)।
কাজের সময়সীমা
বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী একজন কর্মী দিনে সর্বোচ্চ আট ঘন্টা কাজ করবে। অভারটাইম সহ দিনে সর্বোচ্চ ১০ ঘন্টার বেশি কাজ করতে পারবে না। সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৪৮ ঘন্টা কাজ করতে পারবে। ওভারটাইম সহ সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৬০ ঘন্টা কাজ করতে পারবে। এই কাজের সময়সীমার মধ্যে খাবার খাওয়া, টয়লেট এ যাওয়াও অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই দেখা যায় এই আইনগুলো মানা হয় না। বিশেষ করে অলিখিত কাজগুলোতে অনেকটাই জোরপূর্বকভাবে শ্রমিকদেরকে অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য করা হয়, কিন্তু উপযুক্ত পারিশ্রমিক দেয়া হয় না। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে কর্মীদেরকে ওভারটাইম কাজের সুযোগ দেয়া হয় না।
ন্যায্য মজুরী/পারিশ্রমিক
বাংলাদেশ কান্ট্রি প্রোফাইল এর ২০১০ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, একজন শ্রমিক বা দিনমজুরের সপ্তাহিক বেতন প্রায় ১৭০০/- টাকা। অর্থাৎ দৈনিক গড় বেতন পড়ে প্রায় ২৮০/- টাকা। আর কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ ধার্য করা হয়েছে এক লক্ষ টাকা।
Commentaires